
আগামী ২ অক্টোবর থেকে তাঁর এই নিয়োগ কার্যকর হবে। ১৮ আগস্ট
যুক্তরাজ্যের বিচার বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে
জানানো হয়, ৫০ বছর বয়সী আইনজীবী আখলাকুর রহমান চৌধুরী কিউসিকে হাইকোর্টের
বিচারক হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন করেছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রীতি
অনুযায়ী ‘দ্য অনারেবল মিস্টার জাস্টিস চৌধুরী’ হিসেবে পরিচিত হবেন এই
বাঙালি সন্তান। নিয়োগের অংশ হিসেবেই রানির কাছ থেকে পাচ্ছেন ‘নাইট
ব্যাচেলর’ (কেবিই) উপাধি।
আখলাকুর রহমান চৌধুরীর জন্ম যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পশায়ারে।
বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান চৌধুরী এবং মা সুলতানা চৌধুরীর দুই ছেলে ও এক
মেয়ের মধ্যে তিনি বড়। বোন ফেরদৌসি চৌধুরী যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য
বিভাগে মনোরোগ চিকিৎসক আর ছোট ভাই জিয়া চৌধুরী বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা কেয়ার ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি
ডিরেক্টর হিসেবে। স্ত্রী সফিনা ও তিন সন্তানকে নিয়ে আখলাক বসবাস করছেন
লন্ডনে।
আজিজুর রহমান চৌধুরী বিলেতে পাড়ি জমিয়েছিলেন ১৯৬২ সালে।
ছিলেন স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো এলাকার প্রথম দিককার রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী। তাঁর
তিন সন্তানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যেই। এই পরিবারের আদি বাড়ি সিলেটের
জকিগঞ্জে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের ঠিকানা ঢাকায়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে আখলাক
বাংলাদেশ ঘুরে যান। তখন তিনি বাংলাদেশে নতুন নিয়োগ পাওয়া বিচারকদের এক
কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দেন। সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র
কুমার সিনহা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ বিচার বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের
সঙ্গে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত স্বপ্নারা খাতুন এর আগে যুক্তরাজ্যের
নিম্ন আদালতে (ক্রাউন কোর্ট) বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। আখলাক হয়েছেন
হাইকোর্টের বিচারক, যা ব্রিটিশ বিচার বিভাগের তৃতীয় সর্বোচ্চ ধাপ।
পারিবারিক সূত্র থেকে জানা যায়, বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে
(আখলাক) বড় হয়ে বিচারক হবেন। তাই বিচারক হওয়ার খবর পেয়েই আখলাক ছুটে যান
বাবার কবর জিয়ারত করতে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পরিচিতজনেরা তাঁকে অভিনন্দন
জানাতে সভা আয়োজনের প্রস্তাব করেন। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে
বলেন, তাঁকে যে হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এটা তাঁর একার
অর্জন নয়; এ অর্জন বিলেতের গোটা বাঙালি সম্প্রদায়ের। তাঁর এ সুযোগ লাভ
পুরো বাংলাদেশি সম্প্রদায়কে সম্মানিত করেছে বলে মনে করেন তিনি।
গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক আখলাকুর
রহমান চৌধুরী। কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন আইনজীবী হতে। সে কারণেই পরে তিনি
ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন। ১৯৯২ সালে বার
অ্যাট ল সম্পন্ন করে শুরু করেন আইন পেশা। পরের গল্প কেবলই পেশাগত সাফল্যের।
বাণিজ্য, কর্মসংস্থান ও তথ্য আইন বিশেষজ্ঞ আখলাকুর রহমান
চৌধুরী দীর্ঘদিন পররাষ্ট্র দপ্তর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, রাজস্ব বিভাগসহ
যুক্তরাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগে আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। দ্বিতীয়
সর্বোচ্চ আদালত ‘কোর্ট অব আপিল’-এর দুজন বিচারকের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা আছে
তাঁর। ছিলেন ব্রিটিশ তথ্য কমিশনারের উপদেষ্টাও। তথ্য অধিকার ও তথ্য
সংরক্ষণবিষয়ক মামলা লড়তে গিয়ে এ-সংক্রান্ত আইনে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আইন
পেশায় অভিজ্ঞতা ও ব্যতিক্রমী অবদান রাখার জন্য তাঁকে ২০১৫ সালে কুইন্স
কাউন্সেল বা কিউসি খেতাব দেওয়া হয়।