
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৮ বছর
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে ফের কর্মী নেয়ার চুক্তি করে দুই
দেশ। তবে সেই প্রক্রিয়াটা যাতে স্বচ্ছ এবং উভয় দেশের
সরকারের জন্য স্বস্তির হয় সে চেষ্টা ছিল প্রথম থেকেই। কারণ, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি
কর্মী পাঠিয়ে সেসব
রিক্রুটিং এজেন্সি সীমাহীন অনিয়ম ও প্রতারণা করেছে, তাদের এবার কালো
তালিকাভুক্ত করেছে মালয়েশিয়া সরকার। দেশটিতে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে তাদের এবার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এ লক্ষ্যে মালয়েশিয়ায় প্রথম ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট
সিসটেম (এফডব্লিউসিএমএস) অর্থাৎ সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ১২টি ধাপ অনুসরণ করে কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে। এতে কর্মীদের
নিয়োগের দিন থেকে শুরু করে চুক্তির মেয়াদ শেষে দেশে ফিরে আসা পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় মনিটরিংয়ে থাকবে কর্মী ও মালিকপক্ষ। বিশেষ করে এই
পদ্ধতিতে কর্মীদের নিয়োগ, মেডিকেল রিপোর্ট, তাদের বেতন, চিকিৎসা, ইনস্যুরেন্স, ওভারটাইম, ভিসা নবায়ন, মালিকপক্ষের প্রোফাইল সবকিছুই বাংলাদেশ ও
মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কম্পিউটারের মাধ্যমে গোপন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে দেখতে পারবেন। ফলে কোনো কর্মী তার ন্যায্য অধিকার থেকে
বঞ্চিত হচ্ছে কিনা তা উভয় দেশের সরকার পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। নিয়োগপত্রের কোনো শর্ত অমান্য করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উভয় দেশের সরকার জানতে পারবেন এবং সমস্যা
সমাধানে পদক্ষেপ নিতে
পারবেন।
মালয়েশিয়ায় সফরকালে সেদেশের শ্রমবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশটিতে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ইন্দোশিয়ার প্রায় ৩০ হাজার দালাল রয়েছে, যারা ভিসা ট্রেডিংয়ের সঙ্গে জড়িত। এই চক্রটি মালয়েশিয়ার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগসাজসে বিভিন্নভাবে বাংলাদেশি কর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে। যেখানে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে নিয়োগদাতা কোম্পানির মালিকরা সরকারি ফি (লেভি), বিমানভাড়া, ইন্স্যুরেন্স, চিকিৎসা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন, সেখানে উল্টো মালিকদের টাকা দিয়ে কর্মীর চাহিদাপত্র কিনে নেন এই চক্রটি। মালিকদের প্রতি কর্মীর বিপরীতে ৬০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়ে ওয়ার্কঅর্ডার কিনে নেন এই দালাল চক্রটি। পরে তা বাংলাদেশের অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে বেশি টাকায় বিক্রি করেন। আর এসব খরচ বাংলাদেশের কর্মীদেরকেই বহন করতে হয়। ফলে অভিবাসন খরচ ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা হয়ে যায়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দীর্ঘদিন ধরে এই দালালচক্র বা মধ্যস্বত্বভোগীদের নির্মূল করার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। এবারই প্রথম একটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই চক্রের কোনো ধরনের যোগসাজশ ছাড়া মালয়েশিয়া থেকে ওয়ার্কঅর্ডার আসা শুরু হয়েছে। যার ফলে এসব দালালচক্র এখন কর্মীদের নিয়ে কোনো প্রতারণা ও ব্যবসা করছে পারছে না।
এ ব্যাপারে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন মানবকণ্ঠকে জানান, মালয়েশিয়া নতুনভাবে জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মী নেয়া শুরু করেছে। এখানে নিয়োগদাতা কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার জন্য সেদেশের সরকারের কাছে সরাসরি আবেদন করেন। এ ক্ষেত্রে দালালচক্রের কোনো সদস্যের প্রয়োজন নেই বা অনৈতিক কোনো লেনদেনের সুবিধা পান না। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী আনার সুযোগ দেয়া হবে, সেটাও মালয়েশিয়ার সরকার নির্ধারণ করে থাকেন। ফলে রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে নিয়োগদাতা কোম্পানির আগে থেকে কোনো আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নেই। এ ছাড়া কর্মী নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াটি উভয় দেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকর্তারা নিজের কম্পিউটারে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন। এ ছাড়া পুরো প্রক্রিয়াটি আন্তঃনেটওয়ার্কের মাধ্যমে হওয়ায় কেউ অনিয়ম করার চেষ্টা করলে বাকিরা তা দেখতে পারবেন।